দশ বছরে ১২০৯জন গুম, একদিন তদন্ত করে বিচার হবে: রিজভী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের দশ বছরের শাসনামলে দেশে ১২০৯ জন মানুষ ‘গুম হয়েছে’ দাবি করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোনো একদিন অবশ্যই তদন্ত করে এর বিচার হবে। ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় ওই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২০৯ জন। যার ভেতরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের সংখ্যা ৭৮১ জন। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুনর কবির পারভেজ, ছাত্রদল নেতা জাকির, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মো. সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব সুমনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর ‘শত শত নেতাকর্মী’ রয়েছেন বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। রিজভী আহমেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে ২০১৪ থেকে ২০১৯ (জুলাই) পর্যন্ত ৩৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৬০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৩৫ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী-র্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ গুমের জন্য সন্দেহ করা হয়-পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাবকে। রিজভী বলেন, একদিন তদন্ত করে এর বিচার হবেই। ‘গুমের শিকার’ পরিবারের সদস্যরা এখনো পথ চেয়ে বসে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়। সন্তানের দুচিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারে কান্না-আহজারি আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না। গুমকে একটি ‘ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকালপ্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মত অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পায়। এই বিএনপি নেতার ভাষায়, সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য। চিরদিনের মতো নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে মানুষ যেন দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বর্তমান সরকার ‘গুমকে হাতিয়ার হিসেবে’ ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদ মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে নাই। মৌলভীবাজার কলেজের শহীদ জিয়া অডিটরিয়ামের নামফলক ছাত্রলীগ কর্মীরা ভেঙে ফেলেছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা মহিলা দলের গ্রেফতার সভাপতি আলেয়া বেগম মনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোসনা বেগমের মুক্তিরও দাবি জানানো হয় এ সংবাদ সম্মেলন থেকে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, আবেদ রাজা, আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।